২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:২০:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দেশের প্রধান দুই শত্রু বিএনপি আর ডেঙ্গু: ওবায়দুল কাদের মিয়ানমারের নাগরিকের সহযোগিতায় মানব পাচার পাকুন্দিয়া প্রেসক্লাবের ঈদ পুনর্মিলনী দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানালেন নবাব আলী হাসিব খান বানভাসি মানুষের পাশে মুগদা থানা ইমাম উলামা পরিষদের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি মুফতি শফিকুল ইসলাম মাজহারীর নগদ অর্থ বিতরণ আদালত কর্তৃক উজ্জ্বল মিয়াজী হত্যা মামলার ৪ আসামির জামিন আবারও না মঞ্জুর ৩ জেলায় উজ্জ্বল মিয়াজী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ নৌ পুলিশ ও ডাকাতদলের মধ্যে গোলাগুলির আহত ৪, আটক ১ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল মিয়াজী হত্যাকান্ডে জড়িতরা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাবলা ডাকাত ও কবিরখালাশীকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২ লাখ টাকা পুরস্কার


ভালুকায় সংরক্ষিত বনের গাছ উজাড় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল।
আমিনুল ইসলাম ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২১
ভালুকায় সংরক্ষিত বনের গাছ উজাড় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল।


ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ৮৯টি করাতকলের মধ্যে ৭৭টির নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র ও অনুমোদন, পৌরসভার মধ্যে লাইসেন্সকৃত মাত্র ১২টি। সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব করাত কল। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারে মধ্যে গড়ে ওঠা ৭ ডজন করাতকল উজার হচ্ছে বনজ সম্পদ। এদিকে অননুমোদিত কলের কারণে প্রতি বছর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়। কারও মতে আনাচে কানাচে রয়েছে প্রায় শতাদিক করাত কল। ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার সরে জমিনে জানাযায়, ভালুকার মেদুয়ারী নিঝুরী বাজার স্থানীয় সোহরাব উদ্দিনের বসতবাড়ী সংলগ্ন ৬শতক জমি মাসিক ২৫শত টাকা বাড়া নিয়ে পানিভান্ডার আব্দুল্লাহ নামে এক কাঠ ব্যাবসায়ী ১০বছর যাবত অবৈদ করাত কল স্থাপন করে সরকারী রাস্তার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঠ রেখে দিন রাত অবাধে চিরাই করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি একই ইউনিয়নের বগাজান টু বরাইদ রোডের পাশে বসতবাড়ী সংলগ্নে ৩২ ঘড়া মেশিন বসিয়ে উচ্চ আওয়াজে স্থানীয় শহীদুল্লাহ ও হেলাল উদ্দিন ২টি অবৈদ করাত কল স্থাপন করে দিন রাত কাঠ চেরাই করে যাচ্ছেন। শহীদুল্লার ছেলে জহিরুল জানান, বাড়ীতে ১৫ জন সদস্য রয়েছে তার মধ্যে ৫ জন শিশু ও স্কুল পড়োয়া ছাত্রছাত্রী রয়েছে উচ্চ আওয়াজে শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। ভালুকা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার পৌরসভায় যথাযথ পক্রিয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত করাতকলের সংখ্যা মাত্র ১২টি। অপরদিকে লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত ৭৭টি। এরমধ্যে লাইসেন্স পেতে আবেদন করছে প্রায় ৪০টি এবং মামলা চলমান রয়েছে প্রায় ১৫ টির বিরোধ্যে। বন বিভাগের আইন অনুযায়ি, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও এই এলাকার মধ্যে রয়েছে শতাদিক করাতকল। সংরক্ষিত সামাজিক বনায়নের বন ঘেঁষে, এমনকি বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কাছেই স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ করাতকল। জানা যায়, সংরিক্ষত বন থেকে চোরাই পথে আনা বিভিন্ন গাছ অবাধে চেরাই ও বিক্রি হচ্ছে এসব করাত কলে। বন উজারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। করাতকল ( লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ (৭খ) তে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার মধ্যে করাত কল স্থাপন করা যাবে না। উক্ত আইনের (৭ক) তে সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এটা নিষিদ্ধ। অথচ এই নিদের্শনা মানছে না কেউ। বিধি-বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র বসানো হয়েছে এসব অবৈদ করাত কল। একাধিক করাত কল মালিক জানান, শিল্প কারখানার কাঠ কাটার সূত্র ধরেই করাত কলের ব্যবসা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। কোনো সময় ওপর থেকে কেউ এলে তাদেরকে ম্যানেজ করা হয়। অপর দিকে অনুমতি প্রাপ্ত করাতকল মালিকদের অভিযোগ, অবৈধ করাতকলগুলো দেদার চলার কারণে তাদের কলগুলো ভালোভাবে চলছে না। তারা আরো বলেন, বনাঞ্চলের ১০কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন না করার সরকারি বিধান থাকলেও স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানীয় লোকজন বনাঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ওইসব অবৈধ করাতকল। সরেজমিনে স্থানীয়দের অভিযোগ, রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় মালিকরা করাতকল স্থাপন করে দিন-রাত চোরাই কাঠ চিরাই করছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল চালু রয়েছে। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান না থাকায় সংরক্ষিত বাগান বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন। ভালুকার সুশীল সমাজ জানিয়েছেন, শিঘ্রই আমরা মানববন্ধন করব বন ও পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। অবৈধ করাত কলে প্রকাশ্যে বনের গাছ চিরাই ও পাচার হচ্ছে। এতে পরিরেশের ভারসাম্য নষ্ট ও মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। ভালুকা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন অবৈধ করাত কলের কথা স্বীকার করে বলেন, এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ। যারা অবৈধ ভাবে চালাচ্ছে তাদেরকে ইতিমধ্য নোটিশ দেয়া হয়ছে। অনেকে লাইসেন্স পেতে অবেদন করছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে করাতকল স্থাপনের সঙ্গে আমি কিংবা আমার বিট অফিসারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উথুরা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ হারুনুর রশিদ খাঁন অবৈধ করাত কলের কথা স্বীকার করে বলেন, উথুরা রেঞ্জে ৪১ টি করাত কল রয়েছে এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বিভাগীয় প্রধানের বরাবর উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। যারা অবৈধ ভাবে চালাচ্ছে তাদেরকে ইতিমধ্য নোটিশ দেয়া হয়ছে। অনেকে লাইসেন্স পেতে অবেদন করছে যা সংশ্লীষ্ট আইনের নিয়ম বহির্ভূত এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারী কমিশনার ভূমি ভালুকা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, শিঘ্রই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে অবৈদ করাত কলের ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন জানান, অবৈদ করাত কলের ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করা হবে লিষ্ট হাতে পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ.কে.এম রুহুল আমিন জানান, অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন করাতকলের তালিকা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। করাত কল মালিকদের বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সর্তক করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এদের উচ্ছেদ করতে হলে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। মোবাইল কোর্ট করে স্থানীয়ভাবে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন